বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ইবিতে ‘প্লান্ট সাইন্স’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার  শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় করবে ইবি এবং তুরস্কের ইগদির বিশ্ববিদ্যালয় চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী বনাম আসামীর নির্দোষিতা! খোকসার জনগনের সাথে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল আখতার। খোকসার জনগনের সাথে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল আখতার। কুমারখালীতে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের নিকট দোষস্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য বনাম বাস্তবতা! ল’ ফোরাম রাজবাড়ীর মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক সন্ধা অনুষ্ঠিত। চেকের মামলায় আসামীর মুক্তির উপায়! ইবির নতুন ছাত্র উপদেষ্টার দায়িত্বগ্রহণ
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী কর্তৃক মামলা বনাম আইনী ফলাফল!

তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী কর্তৃক মামলা বনাম আইনী ফলাফল!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
স্বামীর সাথে দাম্পত্য কলহ হলেই স্ত্রী সাধারণত: স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় মামলা করে থাকে। এ মামলা করতে প্রাথমিক অবস্থায় বিয়ের কাবিননামার কপি ছাড়া আর কোন ডকুমেন্টস দরকার হয় না। আরেকটি রয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(গ) ধারার মামলা। তবে এ মামলা করতে হলে মারধরের একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এ ধারগুলোর সংজ্ঞার সারমর্ম হচ্ছে, যদি কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে কিংবা অত্যাচার নির্যাতন করে, তাহলে এ ধারগুলোতে মামলা হয়ে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, দাম্পত্য কলহে স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে গেছে। স্বামী বারবার আনতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর স্বামী এক পর্যায়ে তালাক দিয়েছে। স্ত্রী তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির পর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে থানা কিংবা আদালতে গিয়ে এ ধরণের মিথ্যা যৌতুক, নারী নির্যাতনের মামলা করে থাকে। যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, স্ত্রীর অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কিন্তু ন্যূনতম ১ (এক) বৎসর কারাদ- বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ১১(গ) ধারার শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, তিন বৎসর কিন্তু ন্যূনতম এক বৎসর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবেন এবং উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-নীয় হইবেন। তবে মামলার দুটি ধারায় আপোষযোগ্য করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে আসামী গ্রেফতার হলে কিংবা সমন প্রাপ্তির পর আসামীপক্ষ বিজ্ঞ আদালতে নিবেদন করেন যে, বাদিনী তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির এতো দিন পর আসামীর প্রতি রাগান্বিত ও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ বক্তব্যের সমর্থনে বিজ্ঞ আদালতের সামনে ফিরিস্তি আকারে তালাক প্রদানের নোটিশ, ডাক রশিদ, প্রাপ্তি স্বীকারসহ উপযুক্ত প্রমান পেশ করে থাকেন। মাননীয় আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে এবং তালাকের পর মামলা সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে আসামীকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়ে থাকেন। এরপর মামলাটির পরবর্তী ধাপ থাকে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে। চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানীর সময় আসামী পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী বিচারকের নিকট অব্যহতি চেয়ে আবেদন পেশ করেন। যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন তালাকের পরে যদি মামলা দায়ের করা হয় তবে সেই ক্ষেত্রে মামলাটি অচল হবে এবং আসামী অব্যাহতি বা খালাস পাবেন। এ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেন যা রওশন আরা বেগম বনাম মোঃ মিজানুর রহমান ও অন্যান্য, হাইকোর্ট বিভাগ, ১২ এডিসি, পৃষ্ঠা-৯৬ এবং রাষ্ট্র বনাম মোঃ রফিজুল হক, ৬ এএলআর (এডি), ভলিউম-২, পৃষ্ঠা-৯০। মহামান্য হাইকোর্ট এ মামলায় পর্যবেক্ষণে বলছেন, বিবাহ বিচ্ছেদ আগে হয়েছে। কাজেই কজ অব এ্যাকশনের দিনে ভিকটিমকে তার স্বামীর বাড়িতে থাকার কথা নয়। কিন্তু এ জাতীয় একটি মামলায় মাননীয় ট্রাইবুন্যাল আসামী পক্ষে ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫(সি) ধারামতে অব্যহতির আদেশ চেয়ে করা আবেদনটি খারিজ করে আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। আসামী পক্ষ উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন দাখিল করেন। মহামান্য হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে উক্ত অভিযোগ গঠন বাতিল করে আসামীকে অব্যহতি দেন। এরপর বাদী (রাষ্ট্র) পক্ষ মহামান্য হাইকোর্টের উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যান। মাননীয় আপিল বিভাগ সাক্ষ্য ও তথ্য উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেয় যে, অভিযুক্ত স্বামীকে খালাস দেওয়ার হাইকোর্টের আদেশ সঠিক। কাজেই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একেবারেই বনিবনা না হলে স্ত্রীকে সঠিক নিয়ম মেনে তালাক দেয়ার পর স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা যৌতুকের মামলার ফলাফল বাদীর পক্ষে প্রমাণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

কাজেই আপনি যদি স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান, তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যেতে হবে। এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। যদি এমন হয় যে, আপনি জানতে পারলেন না আর হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল, তাহলে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা থেকে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আপনার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়ে যেতে পারে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইনের শিক্ষক ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel